প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান জেলা বিএনপির সভাপতি মুহম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘ওই যে বিএনপির সভাপতি হয়েছে এরকম অনেক লোক আছে নারায়ণগঞ্জে। তিনি এক সময় করেছেন আওয়ামী লীগ, এরপর গেছেন জাতীয় পার্টিতে পরে বিএনপিতে গেছেন। তিনি পরবর্তীতে আবার আওয়ামী লীগ এবং পুনরায় বিএনপিতে গিয়েছে। এভাবে ৫-৬ বার দল বদল করেছে। এরা রাজনীতি করে নিজের স্বার্থে, নিজের আখের গুছানোর জন্য। পলিটিক্যাল ভাষায় যাকে বলা হয় পলিটিক্যাল প্রস্টিটিউট। তাই ওদের কাতারে যাও, আমার কোন আপত্তি নাই। ওই দিকে যাও ধানের শীষের জন্য ভোট করো আমার আপত্তি নাই। কিন্তু আমাদের সাথে থেকে মানুষজন কষ্ট পাবে এরকম লোক আমার দরকার নাই। আমার সাধারণ মানুষ দরকার’।
রবিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের পাগলা এলাকায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পেশি শক্তি দেখিয়ে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে তাদেরকে ইঙ্গিত করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। একটা কথা বলেছেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। সোনার মানুষের পরিবর্তে যারা মাসেল ম্যান তৈরি করে ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে বলবো, সাবধান হয়ে যান। সাবধান হয়ে যান, বেইজ্জত হবেন। একদম বেইজ্জত করে দিবো মানুষের সামনে। আমার নিজের কলিজার জোর সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আছে কিন্তু। বাংলাদেশে কলিজার জোর দেখাই তা নয় কিন্তু, আমেরিকাতে দুই তিনশো ছিল আর আমি একলা ছিলাম। আমি আমার কলিজার জোর সেখানে দেখিয়ে আসছি। পালিয়েছে ওরা মারও খেয়েছে ওরা।
চলতি মাসের শেষে শামীম ওসমান মাঠে নামবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংশোধন হন, আল্লাহ মাফ করবেন। বিশেষ করে আমার দলের লোকেরা। কে কালকে বাঁচবেন জানেন না কিন্তু। মানুষের মনের মধ্যে জায়গা করে নেওয়ার নাম হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি করতে চাননা কইরেন না। তাহলে আমাদের গায়ের ওপরে পড়বে না। কিন্তু আমাদের দল করে মূল কাজ হচ্ছে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করা। আমরা এখন এখানে আসছি হাত তালি দিচ্ছে সবাই বাহবা দিচ্ছে এটার কোন দাম নাই। আমার মৃত্যুর পর যদি মানুষ বলে, আহারে লোকটা মরে গেছে। ওইটা বড় প্রাপ্তি। আমরা এই মাসের শেষ থেকে মাঠে নামবে, যদি আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। আমি সবাইকে অনুরোধ করে গেলাম, আমাদের নেতাদের সাথে যদি কোন খারাপ লোক থেকে থাকে তাকে সংশোধন করেন নয়তো তাকে পরিহার করেন। এটা না হলে বিনা কারণে আপনি মানুষের কাছে খারাপ হবেন।
শামীম ওসমানের ছবি তুলে সাধারণ জনগণের ওপরে জুলুম করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার সামনে সব ভাল মানুষ, আমার সামনে আসলে দাড়ি রেখে সবাই ভাল হয়ে যায়। আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে একটা ছুবি তুলে, পরে সেটা অফিসে টাঙিয়ে রাখে। ওই ছবিটা দিয়ে মানুষের ওপরে জুলুম করে। আর মানুষ-জন গালি দেয় আমার বাব- মা কে।
আগামীতে তিনি মাঠে নামবেন উল্লেখ করে বলেন, আমরা মাঠে নামবো ইনশাআল্লাহ। আমি গোপনে আসবো, সে যেই হোক না কেন। আমি চিনবো না, কোন খাতিল নাই। এতে ইলেকশন করি না করি তাতে কিছু আসে যায়না। হুকুমের মালিক আল্লাহ, তিনি যদি হুকুম দেন শামীম ওসমান তুই হবি। তাহলে পৃথিবীর আটশ কোটি মানুষের ক্ষমতা নাই আমাকে ঠেকানোর। আর আল্লাহ যদি হুকুম না দেন, তাহলে পৃথিবীর আটশ কোটি মানুষ মিলে আমার জন্য কিছু করতে পারবে না।
রাজনীতিকে ইবাদত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি হারাম খাই না। নারায়ণগঞ্জের কোন জায়গায় এক শতাংশ জমিও কিনি নাই। নিজের বাড়ি যেটা করছি, বড় ভাই আমাকে দিয়েছিল। আমার বাবা আমাদের জন্য এক টাকা রেখে যাননি। রাজনীতিকে আমরা ইবাদত হিসেবে নিয়েছি। তাই আজকে পরিষ্কার ভাষায় একটা কথা বলতে চাই, ইলেকশন করবো কি করবো না সেটা পরের হিসাব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলীসহ কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।