নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কতৃক হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রতিবাদে স্থানীয় সরকার সচিব বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে নগরবাসী। সেইসাথে বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার মানববন্ধন কর্মসূচীর ঘোষনা করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ আগষ্ট) আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স আরোপ করায় সিটি কর্পোরেশনের সমালোচনা করেছেন একাধিক সদস্য। তারা বলেন, অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করায় সিটিবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তবে এনিয়ে আইন-শৃংকলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয় সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ করা হয়।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বন্দরের ৯টি ওয়ার্ডের হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর দাবিতে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে এলাকাবাসী। ১৯০০ বাসিন্দার স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর দফতরেও জমা দেয়া হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯ থেকে ২৭নং ওয়ার্ড সাবেক কদমরসুল পৌরসভার এলাকার অর্ন্তভুক্ত ছিল। ২০১১ সালের মে মাসে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ও কদমরসুল পৌরসভাকে নিয়ে সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। শীতলক্ষ্যা নদীর কারণে পূর্বপারের বাসিন্দাগন শহরের তুলনায় সর্বপ্রকার আধুনিক সুবিধা বঞ্চিত। বর্তমান বিশ^ মন্দার প্রভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কর্মহীনতা, আয় সংকোচনসহ নানা যৌক্তিক কারণে মানুষের জীবনযাত্রার মান দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। বর্তমানে অনেকেই উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম বাড়ি ভাড়া। অনেক সময় বাড়ি খালি থাকে। অনেকে ভাড়া দিতে পারেনা। বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ নেই। এই বৈশি^ক মন্দা ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে নতুন বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স মরার উপর খাড়ার ঘা সমতূল্য।
উল্লেখ্য, এর আগে নাসিকের বন্দরের ৯টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে বন্দরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কয়েক দফা বৈঠকের পরে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু হয়। প্রায় ১ হাজার ৯০০ বাসিন্দার সাক্ষর সংগ্রহ করে আন্দোলনকারীরা। গত ২৫ জুলাই মেয়রের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বন্দর আমিন আবাসিক এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সহ সভাপতি আশাবদ্দিন খান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পাশে ঢাকা সিটি করপোরেশন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স এর তুলনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স প্রায় দ্বিগুন আদায় করা হচ্ছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃক আবাসিক বাড়ীর ক্ষেত্রে বার্ষিক মূল্যায়নের উপর ৭% হোল্ডিং কর ৩% বিজলী বাতি ২% পরিছন্নতা রেইট ৩% কর সর্ব মোট ১২% কর আরোপ ও আদায় করা হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃক পি ফরমের মূল্য উত্তরের ক্ষেত্রে ১০ টাকা এবং দক্ষিণের ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়। ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃক হোল্ডিং বা বাড়ীওলার উপর পানি কর বা পানির নামে বিবিধ কর আরোপ বা আদায় করে না। ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃক নতুন হোল্ডিং সৃষ্টির ক্ষেত্রে বা নতন বাড়ীর কর কালে মালিকানা দলিল মূল্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত কর আদায় করেনা।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কর্তৃক হোল্ডিং সমূহের ক্ষেত্রে ৭% হোল্ডিং কর ৭% পরিছন্নতা রেইট ৫% বিজলী বাতি ৩% বিবিধ কর নামে পানি কর সর্ব মোট ২২% কর আরোপ ও আদায় করছে। মূূলত বাড়ী কর থেকে বিবিধ কর নামে কোন কর বা রেইট আদায় যোগ্য নয়। নাসিক কর্তৃক পি ফরমের মূল্য ২০০ টাকা আদায় করা হয়।
তিনি আরও বলেন, নাসিক নতুন হোল্ডিং সৃষ্টির বা নতুন বাড়ীর জন্য দলিল মূল্যের উপর শতকরা হিসাবে অতিরিক্ত কর আরোপ বা আদায় করে অতিরিক্ত কর আদায়ের লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবেই নতুন হোল্ডিং বা নতুন বাড়ীর ক্ষেত্রে জমি বা বাড়ীর মালিকানা দলিলাদি গ্রহন না করে মালিককে দখলদার দেখাইয়া বার্ষিক মূল্যায়ন নির্ধারন করে। যা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের একান্তই মনগড়া। তাদের ইচ্ছে মত আমাদের ধোকা দিয়ে বাড়তি টাকা আদায় করে নিচ্ছে। আমরা অবিলম্বে বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স প্রত্যাহার করে পুর্বের কর বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।
এব্যাপারে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে সিটি কর্পোরেশনের একটি সূত্র জানিয়েছে ইতিমধ্যে নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে ২০% কমানো ঘোষনা দেয়া হয়েছে। নগরবাসী বলছে, তিন চারগুন বাড়িয়ে ২০% কমানো মশকারা ছাড়া আর কিছুই না।